বুধবার বিকেলে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের কারা কনভেনশন সেন্টারে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, একজন আইনজীবীর পাশাপাশি আমিও একজন ব্যবসায়ী। সে জন্য ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া আমি বুঝি।
আপনারা আমার কাছে ২৮টি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনারা আমাকে নির্বাচিত করলে আপনাদের শুধু ২৮টি সমস্যা নয়, আরো অনেক সমস্যাও আমার মনে হয় না সমস্যা হিসেবে থাকবে।
তাপস বলেন, ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত যেকোন সিদ্ধান্ত ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সমাধান করা হবে। পুরান ঢাকায় যেসব কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা রয়েছে সেসব আপনারা সিটি কর্পোরেশন জায়গার ব্যবস্থা করলে আপনারা সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি সড়কে যানজট ও প্রশস্ত রাস্তা ও পার্কিংয়ের বিষয়ে বলেছেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চকবাজারসহ এলাকাভিত্তিক বড় পরিসরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আমরা করব। একই সময় তিনি নির্বাচিত হলে কোনো রকম কর বৃদ্ধি করা হবে না বলেও আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীদের।
তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন একটি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। আমার বিশ্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে আগামী দুই বছরের মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড় করানো সম্ভব হবে।
তাপস বলেন, আমি চাই আমার সন্তানেরা এই মাটিতে বড় হোক। আপনারাও সেই স্বপ্ন দেখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছেন। সেই উন্নত দেশের জন্য উন্নত ঢাকা গড়তে আমরা কাজ করব। আমি জানি আমার উপর আপনাদের আস্থা আছে। কারণ আমি যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেই তখন চিন্তা ভাবনা করেই নিই।
তিনি বলেন, আমি জানি এই পথে আসলে আমাকে সংসদ সদস্য পদ ও আইন পেশা ছাড়তে হবে। আমি মনে করছি ঢাকাতে পরিবর্তন করা দরকার এবং এখনই। তাই আমি সবকিছু ছেড়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ঢাকাকে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়তে পাঁচটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কাজ করব।
তাপস বলেন, ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, উন্নত ডাকা। আমরা নির্বাচিত হলে ঐতিহ্যের ঢাকাকে পুনর্জীবিত করব। তার স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্ববাসীর সামনে তাকে উপস্থাপন করব। পাশপাশি সবুজায়ন, বায়ু দূষণ রোধ ও অন্যান্য সব সমস্যা সমাধান করে অচল ঢাকাকে আমরা সচল ঢাকা করতে চাই।
তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরা ঢাকাকে সাঁজাতে চাই। তাতে পরিবহন ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন আনতে চাই। ঢাকার সড়কগুলোকে আমরা আলাদা আলাদা ভাবে ভারী যানবাহন চলাচল, গণপরিবহন চলাচল, হালকা ও মাঝারি পরিবহন চলাচল এবং কিছু সড়ক শুধুমাত্র চলাফেরা ও হাঁটার জন্য নির্ধারণ করতে চাই।
একই সময়ে রাজধানীতে কোনো উইপোকার স্থান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীকে দখলদারমুক্ত ও মাদকমুক্ত হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, ঐতিহ্যের ঢাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। যদিও এখনো পর্যন্ত কিছু কিছু এলাকায় এই ব্যবস্থা রয়েছে। মাদকসহ অন্যান্য সমস্যা আমরা নির্মূল করব। বুড়িগঙ্গার পূর্বের পরিবেশ আমরা ফিরিয়ে আনবো। প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে সব নাগরিক সুবিধা আপনাদের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিশ্চিত করবো আমরা।
সম্মেলনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা তাদের বক্তব্যে অপর্যাপ্ত পার্কিং, ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স এফবিসিসিআই থেকে দেয়া, পুরাতন জেলখানার স্থানে আধুনিক সুপরিসর পার্কিং, চকবাজার সংযোগ সড়ক প্রশস্ত করা, কাঁচাবাজার আধুনিক ও প্রশস্ত করা, পুরনো ঢাকায় আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন সিটি কর্পোরেশনের জায়গা বরাদ্দের ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতিসহ মোট ৩৮টি দাবি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে উপস্থাপন করেন।